আসুন আমরা নিয়মিত কুরআন পাঠ করি

আসুন আমরা নিয়মিত কুরআন পাঠ করি
Photo by Abdullah Arif / Unsplash

মুমিন মাত্রই হৃদয়ে থাকবে কুরআনের ভালোবাসা। কিন্তু এই ভালোবাসাকে জিইয়ে রাখা আমাদের দায়িত্ব। এটা কীভাবে করবো? কুরআন থেকে দূরে সরে! নাকি নিয়মিত কুরআন পাঠ করে? আমাদের কী নিয়মিত কুরআন পাঠ হয় এই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে? যদি না হয় তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য।

প্রতিদিন পড়ার বা তিলাওয়াতের জন্য যা নির্ধারণ করা হয় সেটাকে 'হিযব' (الحجب) বলা হয়।

প্রতিদিনের ‘হিযব’ আমার জন্য নেয়ামতস্বরূপ। বোঝা নয়। বহু মানুষ এই নেয়ামত থেকে বঞ্চিত। কারণ তারা এটাকে বোঝা মনে করে। চাপ মনে করে। সময়ের অপচয় মনে করে। অপর দিকে অনেক সৌভাগ্যবান মানুষ নিয়মিত হিযব আদায় করে, সুখের সন্ধান পেয়ে যায়। আল্লাহর দরবারে মাকবুল হয়ে যায়।

কুরআন পাঠের সময়টা চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে অন্যতম উজ্জল সময়। প্রকৃত জ্ঞানীরা কোনো কিছুর সাথেই এর তুলনা করতে রাজী নন। তারা পরিপূর্ণ প্রস্তুতি নিতে থাকেন ‘সুন্দর’ সময়টুকু উদযাপনের জন্য। সচেতন-সজাগ হৃদয়ে তেলাওয়াত শুরু করেন। তীব্র পিপাসা থাকাবস্থাতেই তারা নিত্যকার ‘হিযব’ শেষ করেন।

কিছু তেলাওয়াতকারী আছেন। তারা রুটিন তিলাওয়াত করেন। একদিনও বাদ পড়ে না। কোনোরকমে প্রতিদিনের ‘হিযব’ শেষ করেন। ফাঁকে ফাঁকে কথা বলেন। চা খান। মোবাইল ধরেন। হাসেন। এদিক-ওদিক তাকান। উঁহু, কুরআন আমার পুরোটা দাবী করে! সমস্ত চিত্তের গভীর সমর্পণ দাবী করে। দুলে দুলে কোনো রকমে পারা শেষ করলেই হবে না।

জীবনের অন্যতম ‘আনন্দ’ কী? -কুরআন কারীমের দিকে তাকিয়ে থাকা। আমি যতই মুখস্থ পড়তে পারি, কিছু সময় কুরআন কারীম হাতে নিয়েই পড়ব। এটাও বিশেষ এক নেয়ামত। এর প্রভাব অনস্বীকার্য। উসমান রা. কুরআনের মাঝে ডুবে গিয়ে শত্রুভয়কেও উপেক্ষা করতে পেরেছিলেন।

কুরআন তিলাওয়াত, ক্লান্ত পথিকের শ্রান্তিবিনাশী আৱক। দুঃখ-দুর্দশায় জর্জরিত ব্যক্তির জন্য কোমল ছোঁয়া। ছাতিফাটা রোদ্দুরে মরুভূমিতে মরিচিকা দেখে দিশেহারা হওয়া উদ্ভ্রান্তের কম্পাস। শুষ্ক খরখরে হয়ে যাওয়া হৃদয়ের বসন্ত।

কুরআন পড়তে গিয়ে, আমার প্রতি অর্পিত দায়িত্ব পালন করে ফেলছি, ভারমুক্ত হচ্ছি। বেশ তৃপ্তিকর কাজ সেরে নিচ্ছি। এমন ভাব মোটেও অন্তরে ঠাঁই দেয়া যাবে না। জীবনে কতভাবে কুরআনের প্রতি অবহেলা দেখিয়েছি, কতভাবে কুরআনকে উপেক্ষা করেছি, কুরআন কারীমের সুশীতল ছায়া থেকে কতদিন দূরে থেকেছি, সেজন্য লজ্জিত অনুতপ্ত হৃদয় নিয়ে কুরআনের সামনে নতজানু হয়ে বসতে হবে।

যে মুমিন কুরআন তিলাওয়াত করে, সে উতরুজ্জা (সুগন্ধিযুক্ত লেবুজাতীয়) ফলের মত । তার ঘ্রাণ উত্তম। স্বাদ উত্তম। যে মুমিন কুরআন তিলাওয়াত করে না, সে মুমিন খেজুরের মতো, ঘ্রাণ নেই তবে স্বাদটা ভালো। যে মুনাফিক কুরআন তিলাওয়াত করে, সে রায়হানা ফুলের মতো। ঘ্রাণটা উত্তম তবে স্বাদটা তিতা। যে মুনাফিক কুরআন তিলাওয়াত করে না, সে হানযালা (একপ্রকার টকজাতীয়) ফলের মতো। কোনও ঘ্রাণও নেই স্বাদটাও বিস্বাদ। (বুখারী)

যে ব্যক্তির মধ্যে কুরআন নেই, সে বিরান ঘরের মতো। (তিরমিযী)

উসমান রা. বলে গেছেন, -যদি আমাদের হৃদয়টা পবিত্র হতো, আমরা কখনোই কুরআন পাঠ করে তৃপ্ত থাকতে পারতাম না। শুধু পড়েই যেতাম। পড়েই যেতাম ।

কুরআন তিলাওয়াত নিছক ইবাদত নয়, এটা সব মুশকিলের আসান। ওলামায়ে কেরাম, ইলমী কোনও বিষয়ে সমস্যায় পড়লে, কুরআন নিয়ে বসে যেতেন। আমি যদি কুরআন কারীম গভীর মনোযোগে পড়ি, তাহলে আমার কাছে দুনিয়ার কোনো বিষয়ই দুর্বোধ্য থাকবে না।

কুরআন তিলাওয়াত করা মানে, হৃদয়কে ওহীর আলোয় আলোকিত করা। আমি কুরআন কারীম তিলাওয়াত করছি মানে, আমার হৃদয়ের চারপাশটা আলোকিত হয়ে উঠছে। আমি পৃথিবীতে থেকেও আর এখানের নই, আসমানী মানুষে পরিণত হয়েছি।

এখন আমি কিছু সুরাহ-র নাম দিয়ে দিচ্ছি যা রোজ পড়লে অনেক ফজিলত আছে। দৈনন্দিন পড়া যায় এমন কিছু সুরাহঃ

  • প্রতিদিনঃ

    • সকালে ফজর নামাজের পর সুরাহ ইয়াসিন পড়াঃ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পড়লে অনেক ফজিলত আছে।
    • রাতে সুরাহ মুলক পড়াঃ কবরের আজাব থেকে রক্ষা পেতে এই সুরাহর ফজিলত অনেক
    • সুরাহ মুলকের পর সুরাহ সিজদাহ পড়াঃ কেননা এটা সুন্নাত, মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) পড়তেন
    • কোন এক সময় সুরাহ কাহফ এর প্রথম অথবা শেষ ১০ আয়াত পড়াঃ শেষ জামানায় ফিতনা থেকে বেচে থাকতে
  • শুক্রবারঃ

    • প্রতিদিনের সুরাহগুলো পড়া
    • এরপর সুরাহ কাহফ পড়াঃ শুক্রবারে সুরাহ কাহফ পড়লে আল্লাহ তাকে বিশেষ নূর দিবেন
    • এবং সুরাহ দুখান পড়াঃ গুনাহ মাফ ও জান্নাতে ঘর তৈরীর জন্য

আসুন আমরা কুরআন শরীফ তিলাওয়াতকে নিজের অভ্যাসে পরিনত করি। বর্তমানে টেকনোলোজির কল্যাণে মোবাইলেই কুরআন পড়া সম্ভব। আমার ব্যবহৃত কিছু কুরআন এ্যাপ সম্পর্কে জানতেঃ https://www.dailytaqwa.com/amar-byabohito-quran-app/