এগুলোও গীবত
একদিনের ঘটনা। উম্মুল মুমিনীন হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা, নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সম্মুখে উপস্থিত রয়েছেন। আলাপচারিতার এক পর্যায়ে উম্মুল মুমিনীন হজরত সফিয়্যা রাদি.-এর প্রসঙ্গ উঠে এলো। সতীনদের পরস্পরে খুনসুটি লেগে থাকা মানববৈশিষ্ট্যের স্বভাবজাত চাহিদা। হজরত সফিয়্যা রাদি.-এর উচ্চতা খানিকটা খর্ব ছিল। হজরত আয়েশা রাদি. আলাপচারিতার এক পর্যায়ে তাঁর সম্পর্কে হাত দিয়ে ইঙ্গিত করলেন যে, তিনি তো খর্বাকৃতির। তিনি মুখে বলেননি যে, তিনি তো বেঁটে। শুধু হাত দিয়ে ইশারা করেছিলেন মাত্র। নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এভাবে ইঙ্গিত করাটাকেও পছন্দ করলেন না। বললেন, আয়েশা, তুমি আজ এমন একটি কাজ করেছ যে, যদি তোমার সেই কাজের বিষাক্ত গন্ধ সমুদ্রের পানিতে ফেলা হয়, তাহলে গোটা সমুদ্রের পানি দুর্গন্ধযুক্ত ও বিষাক্ত হয়ে যাবে। এত্থেকে আপনি অনুমান করে নিন যে, নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গীবতের যৎসামান্য ইঙ্গিতকেও কীভাবে জঘন্যাকারে ব্যক্ত করেছেন।
এরপর নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কোনো ব্যক্তি যদি আমাকে পৃথিবীর সমস্ত দৌলতও এনে দেয় তারপরও আমি কারও এমন কোনো কথা নকল করব না; যার মাধ্যমে তাকে কটাক্ষ করা হবে, যার মাধ্যমে তার দোষচর্চা হবে।
যদি এমন কোনো কাজ হয়; যা কাজকারী অন্যদের কাছে প্রকাশ করতে ইচ্ছুক নয়, তা যদি কোনো ব্যক্তি তার অজ্ঞাতসারে আলোচনা করে তাহলে সেটি গীবতের মাঝে শামিল হবে। যেমন, এক ব্যক্তি জনসম্মুখে মদ পান করে, সুদ ভক্ষণ করে; কিন্তু এর সঙ্গে সঙ্গে এমন কিছু গুনাহের কাজও আছে, যা সে সবার থেকে লুকিয়ে করে থাকে। সে কখনই চায় না যে, সেগুলো অন্যদের কাছে প্রকাশ হোক। আর সেই গুনাহগুলো অন্যদের জন্যে ক্ষতিকারকও নয়। তাহলে সেই গুনাহের কথা তার অজ্ঞাতসারে আলোচনা করা গীবত হিসেবে সাব্যস্ত হবে। কাজেই তার জনসম্মুখে করা গুনাহের কথা তার অনুপস্থিতিতে আলোচনা করলে গীবত হবে না। এর বিপরীতে জনগণের আড়ালে কৃত গুনাহের কথা আলোচনা করলে গীবতের মাঝে অন্তর্ভুক্ত হবে।
হজরত থানভি রহ. বলেন, কোনো এক মজলিশে হজরত উমর রাদি.-এর ছেলে আবদুল্লাহ বিন উমর রাদি. উপস্থিত ছিলেন। ওই মজলিশে এক ব্যক্তি হাজ্জাজ বিন ইউসুফের মন্দ কর্মগুলো সম্পর্কে মন্তব্য করতে লাগল।
হজরত আবদুল্লাহ বিন উমর রাদি. ওই ব্যক্তিকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, ‘তুমি যে তার নিন্দা আলোচনা করছ তাতো গীবত। তুমি এটা মনে করো না যে, হাজ্জাজের গর্দানের ওপর এত মুসলমানের রক্ত; তাই হাজ্জাজের গীবত করা হালাল হয়ে যাবে; মূলত বিষয়টি এমন নয়; বরং হাজ্জাজের গর্দানের ওপর যত মুসলমানের রক্ত রয়েছে তার হিসাব আল্লাহ তাআলা তার থেকেই নেবেন। আর তোমার এ গীবতের হিসাবও তখন তোমার থেকে নেবেন যা তুমি তার ব্যাপারে এখন করছ। আল্লাহ আমাদের রক্ষা করুন।'
এ কথা ধারণা করার কোনো সুযোগ নেই যে, অমুক ব্যক্তি ফাসেক, আমলে বিদআত করে; কাজেই যত ইচ্ছা তার গীবত করে নেবে; বরং এ ধরনের গীবত থেকে নিজেকে দূরে রাখো। কেননা এগুলো পরিহার করাও অপরিহার্য।
-- Wafilife.com থেকে সংগৃহীত