অনুগ্রহের পথ বন্ধ হওয়ার কারণ
আমরা মাঝে মাঝে অধৈর্য্য হয়ে বলি- আমার সাথেই কেন এমন হয়। বাক্যটা শুনে মনে হয় যেন রব আমাদের সাথে অবিচার করেছেন। কিন্তু আমাদের রব যে ন্যায়বিচারক, তিনি বিন্দুমাত্র অবিচার করেন না। আমরা কী কখনো ঘেঁটে দেখেছি আমাদের থেকে অনুগ্রহ উঠে যাচ্ছে কেন? আমাদের কী আসলেই কোনো ভুল আছে? চলুন দেখে নিই কী কারণে আল্লাহ আমাদের জন্য অনুগ্রহের পথ বন্ধ করে দেন।
অনুগ্রহের পথ বন্ধ হওয়ার কারণ
আল্লাহ তাআলা বলেন : ‘আর যদি জনপদের অধিবাসীরা ইমান আনত এবং তাকওয়া অবলম্বন করত, তবে আমি তাদের প্রতি আসমানি ও পার্থিব নিয়ামতসমূহ উন্মুক্ত করে দিতাম। কিন্তু তারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে। সুতরাং আমি তাদের পাকড়াও করেছি তাদের কৃতকর্মের কারণে।' [সূরা আল-আরাফ : ৯৬]
যদি গ্রামবাসীরা রাসুলগণের কথা বিশ্বাস করত, তাদের কথা মান্য করত আর আল্লাহর যাবতীয় নিষিদ্ধ বস্তু থেকে বিরত থাকত; আল্লাহ তাদের জন্য চতুর্দিক থেকে কল্যাণের দরজাসমূহ উন্মুক্ত করে দিতেন। কিন্তু তারা রাসুলগণকে মিথ্যা সাব্যস্ত করেছে; তাই আল্লাহ তাদের ঘৃণ্য পাপাচার ও অবাধ্যতার কারণে কঠোর শাস্তি দিলেন।
আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ বলেন : ‘যে ব্যক্তি দুনিয়াতে তার জীবিকার প্রশস্ততা চায় এবং দীর্ঘায়ু কামনা করে, সে যেন তার আত্মীয়তার বন্ধন অটুট রাখে।' [সহিহুল বুখারি : ৫৯৮৬, সহিহু মুসলিম : ২৫৫৭]
হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ বলেন : ‘নিশ্চয় বান্দা তার পাপের কারণেই রিজিক থেকে বঞ্চিত হয়।' [মুসনাদু আহমাদ : ২২৪৩৮]
- বর্ণিত আছে, পাপে নিমজ্জিত হওয়ার কারণে ব্যক্তিকে হালাল জীবিকা থেকে বঞ্চিত হতে হয়। হালাল উপার্জনের তাওফিক তার হয়ে ওঠে না।
- পাপের কারণে উলামায়ে কিরামের সাহচর্য থেকে সে বঞ্চিত হয় এবং পুণ্যবানদের কাছে যেতে তার মন সায় দেয় না।
- আল্লাহর নেক বান্দা ও আলিমগণ তার ওপর অসন্তুষ্ট হন, তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন।
- অজ্ঞতায় নিমজ্জিত থাকার কারণে সে আমলের জন্য অপরিহার্য ইলম থেকে বঞ্চিত হয়। প্রবৃত্তির খাহেশ পূরণে ব্যাপৃত থাকায় সংশয় তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে। সন্দেহের জট সে আর খুলতে পারে না। তার বোধ-বিশ্বাস হয়ে পড়ে এলোমেলো । ফলে সে যাযাবরের মতো আল্লাহর আশ্রয়হীন অবস্থায় এদিক সেদিক ঘুরতে থাকে। সত্য ও বাস্তবতার দরজায় কখনো সে করাঘাত করতে পারে না।
- ফুজাইল বিন ইয়াজ বলতেন, ‘কালের দুর্বিপাক ও বন্ধুদের রূঢ়তা দেখে তুমি আশ্চর্য হচ্ছ? এ তো তোমার পাপের পরিণতি!
- অবৈধ উপার্জন নেক কাজের স্বল্পতার কারণেই হয়ে থাকে।
- ইবনে মাসউদ বলতেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, গুনাহে লিপ্ত হওয়ার কারণে বান্দা ইলম ভুলে যায়।'
- কুরআন মুখস্থ করে ভুলে যাওয়া কঠিন আজাবের ইঙ্গিত বহন করে। তিলাওয়াতের তাওফিক না হওয়া, তিলাওয়াত করতে অস্বস্তি বোধ করা এবং কুরআন ব্যতীত অন্য কিছু নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়া মূলত গুনাহে অভ্যস্ততার শাস্তি ।
- যার মধ্যে দুটা বৈশিষ্ট্য পাওয়া যাবে, তার জন্য দ্বীনি ইলমের দরজা কখনো খোলা হবে না। তা হলো : ক. বিদআত ও খ. অহংকার।
- জনৈক আলিম বলেন, 'আল্লাহ তাআলা যার কল্যাণ চান, তার জন্য সৎকর্মের দ্বার উন্মুক্ত এবং অহেতুক বিতর্কের দ্বার রদ্ধ করে দেন। পক্ষান্তরে যার অকল্যাণ চান, তার জন্য সৎকর্মের দ্বার রুদ্ধ এবং অহেতুক বিতর্কের দ্বার উন্মুক্ত করে দেন।'
- শাফিক বিন ইবরাহিম বলেন, ‘ছয়টি কারণে মানুষ সৎকর্মের তাওফিক থেকে বঞ্চিত হয়।' যথা :
- কৃতজ্ঞতা বাদ দিয়ে শুধু স্বীয় রবের নিয়ামত নিয়ে মত্ত থাকা ।
- আমল বাদ দিয়ে শুধু ইলম অন্বেষণেই পড়ে থাকা।
- পাপ সম্পাদনে খুব অগ্রগামী হলেও তাওবার ক্ষেত্রে উদাসীন হওয়া।
- পুণ্যবান বান্দাদের সাহচর্য গ্রহণ ও তাঁদের কর্মপন্থা অনুসরণে শিথিলতা প্রদর্শন করা।
- দুনিয়াবি তুচ্ছ স্বার্থ হাসিলের জন্য দুনিয়ার পেছনে পাগলের মতো দৌড়াতে থাকা ৷
- পরকালীন কল্যাণের দ্বার তার দিকে ধাবিত হলেও এর প্রতি মোটেও ভ্রুক্ষেপ না করা।
- ইবনুল কাইয়িম বলেন, উল্লিখিত অবক্ষয়সমূহের মূল কারণ হচ্ছে, জান্নাতের নিয়ামতরাজির প্রতি আগ্রহ ও জাহান্নামের শাস্তির ভয়এতদুভয়ের স্বল্পতা। আবার উভয়ের মূল উৎস হচ্ছে, স্বীয় রবের ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাসের দৈন্যতা। উক্ত দৈন্যতা সৃষ্টির মূল উপাদান হচ্ছে, বিচক্ষণতার স্বল্পতা । আবার সবকিছুর মূল উৎস হচ্ছে, স্বভাবজাত হীনতা ও চারিত্রিক দীনতা এবং উত্তমের বিনিময়ে অনুত্তম নিয়ে সন্তুষ্টি প্রভৃতি। কারণ, উন্নত আত্মা কখনো নীচু বিষয় নিয়ে সন্তুষ্ট হয় না।
- সুতরাং হে সম্মানিত প্রিয় ভাই, যদি আপনি স্বীয় রবের ইবাদত ও নিরঙ্কুশ আনুগত্যে উদাসীনতা ও শিথিলতা অনুভব করেন, তখন নিশ্চিত ধরে নিন যে, আপনি উল্লিখিত ব্যাধিগুলোর মধ্য থেকে কোনো না কোনো ব্যাধিতে আক্রান্ত ।
-- Wafilife.com থেকে সংগৃহীত